বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম
রমাদানের আহবান
দ্বীন প্রিয় মুসলিম ভাই ও বোনেরা,
আসসালামু আ’লাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহ।
আহলান-সাহলান-মারহাবান মাহে রমাদান। রহমত, মাগফেরাত আর নাজাতের বার্তা নিয়ে আমাদের দুয়ারে কড়া নাড়ছে হিজরি ১৪৪৫ এর রমাদান। মানবজাতির আলোকিত জীবনের জন্য পূর্ণাঙ্গ দিক-নির্দেশনা সম্বলিত মহিমান্বিত আল-কুরআন নাজিল হয় এ রমাদানে। এ মাসে এমন একটি রাত আছে যা হাজার মাস থেকেও উত্তম। তাই এটি তাকওয়া অর্জনের মাধ্যমে আল্লাহ তাআলা’র প্রিয় হওয়ার মাসও।
তবে মহান আল্লাহ তাআলা তাকওয়া হাসিল করার জন্য কুরআনুল কারিমে (সুরা আল বাকারা: ১৭৭) মহান আল্লাহ, ফেরেশতা, কিতাব ও নবিদের প্রতি ঈমান আনার পাশাপাশি নিকটাত্মীয়, এতিম, মিসকিন, পথিক, সাহায্যপ্রার্থী ও ঋণগ্রস্থদেরকে আল্লাহর মহব্বতে দান করতে নির্দেশ প্রদান করেছেন। পাশাপাশি তিনি সালাত কায়েম ও যাকাত আদায় করতে, ওয়াদা পালন করতে এবং বিপদ-মসিবতে ও সত্য-মিথ্যার দ্বন্দ্ব-সংগ্রামে সবর করতে বলেছেন। আর এসব আমল করলেই সত্যিকার মুত্তাকি হওয়া যাবে, ইনশাআল্লাহ।
আপনারা জেনে খুশি হবেন যে, মসজিদ কাউন্সিল কর্তৃক নিরবচ্ছিন্নভাবে পরিচালিত নি¤েœাক্ত কার্যক্রমকে অধিকতর বেগবান করার একটি মহা সুযোগ এ রমাদান মাস। আমাদের পরিচালিত কার্যক্রমসমূহ:
(ক) চিলড্রেন ওয়েলফেয়ার প্রোগ্রাম (ইয়াতিম খানা): ইয়াতিম, পরিচয়বিহীন, অসহায় ও অটিষ্টিক/প্রতিবন্ধি শিশু প্রতিপালন ও পুনর্বাসন প্রকল্প;
(খ) জীবন–ঘনিষ্ঠ শিক্ষা: কিশোর-কিশোরী এবং বয়স্ক পুরুষ ও মহিলাদের জন্য জীবন-ঘনিষ্ঠ শিক্ষা (কুরআন শিক্ষা) কর্মসূচি;
(গ) সমন্বিত মা ও শিশুস্বাস্থ্যসেবা কর্মসূচি: দরিদ্র, অসহায় ও সুবিধাবঞ্চিত মা ও শিশুদের বিশেষ স্বাস্থ্যসেবা কর্মসূচি;
(ঘ) আদর্শগ্রাম প্রকল্প: দরিদ্র ও অতিদরিদ্র মানুষের জীবন-জীবিকা উন্নয়নের লক্ষ্যে যাকাতের অর্থে পরিচালিত আত্ম-কর্মসংস্থানমূলক প্রকল্প;
(ঙ) মাসিক জিজ্ঞাসা পত্রিকা প্রকাশনা: দৈনন্দিন জীবনে ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে নিয়মিত প্রকাশিত হচ্ছে মাসিক জিজ্ঞাসা পত্রিকা;
(চ) শিক্ষাবৃত্তি প্রকল্প: হিফজ, মাদরাসা, মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক, স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ে মেধাবি শিক্ষার্থীদের জন্য শিক্ষাবৃত্তি প্রকল্প;
(ছ) দুর্যোগকালীন মানবিক সহায়তা কার্যক্রম: বন্যা, খরা ও তীব্র শীতসহ যেকোনো ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগে মানবিক সহায়তাদান ও পুনর্বাসন কর্মসূচি।
সম্মানিত ভাই ও বোনেরা!
দেশিয় ও আন্তর্জাতিক ক্রীড়ানকদের কারসাজিতে নিত্য-প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম বৃদ্ধি পাচ্ছে তো পাচ্ছেই। ফলে দুস্থ-অসহায়-বঞ্চিতদের জন্য নিবেদিত প্রকল্পসমূহ চালু রাখতে মসজিদ কাউন্সিলের আজ নাভিশ্বাস অবস্থা। কিন্তু শত প্রতিকূলতায় আমরা কখনো নিরাশ হয়নি। আল্লাহ তাআলা আমাদের পাশে আছেন। অপরিসীম ধৈর্য আর সহযোগিতার মানসিকতা নিয়ে আপনারাও আমাদের পাশে বরাবর ছিলেন। তাই এবারেও আমাদের বিনীত আহবান, আল্লাহ তাআলার অনুগ্রহ (সম্পদ ও স্বচ্ছলতা) নির্ধারিত (যাকাতযোগ্য সম্পদের ২.৫%) পরিমাণের বাইরেও অধিক থেকে অধিকতর পরিমাণে দান-সদাকা প্রদান করে মসজিদ কাউন্সিলের পাশে থাকুন। এর মাধ্যমে আরশের মালিক আমাদের নিজের ও পরিবারের সদস্যদের জীবন-সম্পদের নিরাপত্তা প্রদান করবেন ইনশাল্লাহ।
আপনারা জানেন, মানুষের মধ্যে সবচেয়ে বেশি দানশীল ছিলেন আমাদের প্রিয় নবি হযরত মুহাম্মদ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম; আর তিনি সবচেয়ে বেশি দান করতেন এ রমাদান মাসেই। হাদিস শরিফে এসেছে, “… যখন জিবরিল আমীন তাঁর সাথে সাক্ষাৎ করতেন তখন তিনি কল্যাণের কাজে প্রবাহমান বায়ুর চেয়েও অধিক দানশীল হয়ে যেতেন” (সহিহ বুখারি: ১৯০২)।
আমরা আপনার প্রদেয় দান-অনুদান/যাকাতের অর্থ কেবল শরিয়াহ নির্দেশিত খাতেই ব্যয় করে থাকি। আপনার নিজের ও প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে নির্ধারিত যাকাত ও দান-অনুদান অধিকতর উত্তম পদ্ধতিতে ও স্বচ্ছতার সাথে ব্যয় এবং কাক্সিক্ষত সুফল পেতে আমাদের প্রাতিষ্ঠানিক উদ্যোগে শরীক হয়ে আমাদের পথচলাকে সহজরতর করুন। মহান রাব্বুল আলামিন আমাদের সকলকে এ মহৎ কাজে অংশগ্রহণ করার তাওফিক দান করে দুনিয়া ও আখিরাতের যাবতীয় কল্যাণ হাসিল করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
সেক্রেটারী জেনারেল
মসজিদ কাউন্সিল